১০ মিনিট স্কুল। বৃহৎ অনলাইন এডুকেশন প্ল্যাটফর্ম। তবে এর শিক্ষকদের কার্যক্রম দেশের শিক্ষিত সচেতন মানুষদের উদ্বিগ্ন করছে। অতি সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠানের একজন ট্রেইনার ঘৃণ্য ও নিষিদ্ধ সমকামীতার পক্ষে পোস্ট করে। সে পোস্টে আরো একজন শিক্ষক সাকিব বিন রশিদকে সমর্থন দিতে দেখা যায়। যাতে প্রাসঙ্গিকভাবেই ব্যাপক ক্ষুব্ধ হন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

সর্বজনসিদ্ধ একটি বিষয় হচ্ছে, শিক্ষকদের প্রভাব শিক্ষার্থীদের উপর পড়ে। আর মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকরাই যখন নির্লজ্জতা অসভ্যতা নোংরামির প্রচারক হয়ে যান তখন মানুষ ক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন হবে এটাই বেশ স্বাভাবিক। শুধু এখানেই শেষ নয়, সাকিব বিন রশিদ কিছু দিন আগেও ইসলাম ধর্ম নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে একটি পোস্ট দিয়েছিলো। যা নিয়েও ব্যাপক সমালোচনা হয়।
এছাড়া সাকিব বিন রশিদকে 10 minutes school প্লাটফর্ম ব্যবহার করেও শিক্ষার নামে অশ্লীলতা ছড়িয়ে আসছে। সমাজে হাজারো অপকর্ম ও পাপাচার ডালভাত হয়ে যাবে যদি শুধুমাত্র লজ্জা ধ্বংস করে মানুষকে নির্লজ্জ করা যায়। নির্লজ্জ মানুষের পক্ষে যে কোন ঘৃণ্য অপকর্ম করা কঠিন কিছু নয়। আর সাকিব বিন রশিদ’রা মূলত সে কাজটিই করার চেষ্টা করে। এক ভিডিওতে মেয়েদের পিরিয়ড নিয়ে আলোচনা করতে যেয়ে তিনি ছেলেদের পরামর্শ দিচ্ছেন, যেখানে পিরিয়ড নিয়ে আলোচনা হবে দূরে সরে যাবে না, কান পেতে শুনবে এবং যা জানতে পারবে তা তোমার ছোট বোন বা বান্ধবীকে জানাবে বা শিক্ষা দিবে।[1] আর এ একান্ত পার্শোনাল মেয়েলি ব্যাপার কেন সবখানে মেয়েদের প্রকাশ্যে বলে বেড়াতে হবে।
আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন। এগুলো কোন ধরনের শিক্ষা বা পরামর্শ। একজন মেয়ের কি মা,খালা,দাদী,নানী,বড় বোন, বান্ধবী নেই? তাহলে এসব বিষয় কেন একজন কথিত যাস্ট ফ্রেন্ডদের বান্ধবীকে বা ছোট কোনকে শিক্ষা দিতে হবে? ছেলেরা সহপাঠী মেয়েদের এখন থেকে এসব বিষয়ে প্রশ্ন করবে সাকিবদের মতে! ছেলেদের কি এখানে নারীদের ইভটিজিং বা যৌনহয়রানি করার শিক্ষা দেয়া হচ্ছে না! আমরা আগেই বলেছি একজন মানুষের লজ্জা উবে গেলে তার পক্ষে যে কোন কিছু করা বা বলা সম্ভব। যার জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছেন তিনি। আর এ শিক্ষা কোমলমতি তরুণ-তরুণীদের দেয়া হচ্ছে।
ক্লাসের নামেও অনেক সময় ভ্রান্ত ধারণা ও অসত্য তথ্য দিতে দেখা যায় সাকিব সাহেবকে। উদাহরণ হিসেবে আমরা 10 minutes school এর সাধারণ জ্ঞানের একটি অনলাইন লাইভ ক্লাস দেখা যাক। লাইভ ক্লাসটির শিরোনাম ‘পৃথিবী বদলে দেয়া দশটি ঘটনা’। এখানে স্নায়ুযুদ্ধসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। আলোচনায় আফগান যুদ্ধ প্রসঙ্গে তিনি তাচ্ছিল্যের সুরে বলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর আফগানিস্তানে কট্টর শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হয়। [2]
প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে, আফগানিস্তানে সে সময় দীর্ঘ দেরযুগের যুদ্ধ ও অস্থিরতার পর একটি নিরাপদ , স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হয়েছিলো। যেখানে আল-কোরআনের বিধান বাস্তবায়ন করা হয়। মাদক- অশ্লীলতা, নির্যাতন নিষিদ্ধ করা হয়। ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু এই শান্তিপূর্ণ ইসলামী শাসনব্যবস্থাকে তিনি উপস্থাপন করলেন নিন্দিত ভাবে। আল্লাহর নির্দেশিত জীবন ব্যবস্থার কথা শুনলেই কিছু মানুষের বিদ্বেষ যেন উগ্রে বের হয়।
এরপর পৃথিবীর ইতিহাস বদলে দেয়া আমেরিকার মধ্যে সংঘটিত সবচেয়ে প্রলয়ংকারী হামলার ইতিহাস বর্ণনা করতে যেয়ে বেশ কিছু ভুল তথ্য দেয়া হয় উক্ত ভিডিওতে। এই হামলার সাথে সাথে নাকি অভিযুক্ত জিহাদী সংগঠনটি দায় স্বীকার করে।[3] এটা মিথ্যে দাবি। বরং কোন প্রকার আলোচনা বা প্রমাণ ছাড়াই একটি স্বাধীন রাষ্ট্র আফগানিস্তানে হামলা চালায় আমেরিকা। [ যদিও এখন পরাজিত হয়ে শান্তিচুক্তি করে পালাচ্ছে] অভিযুক্ত সংগঠন অনেক বছর পরে এ হামলার কথা স্বীকার করে। এবং শত বছর ধরে আমেরিকার চালানো ফিলিস্তিনসহ লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ মুসলিমদের হত্যার প্রতিশোধ, আগ্রাসন বন্ধ ও স্থল যুদ্ধের জালে আটকে ফেলার কৌশল হিসেবে ব্যক্ত করে, পরে সে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ আটকে পরে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে আছে।
এই হামলাকে দায়ী করে নাকি আমেরিকা ইরাক ও অন্যান্য আরব রাষ্ট্র হামলা চালায়! এটাও মিথ্যা। ইরাকে প্রথম আমেরিকা হামলা চালায় ও অর্থনৈতিক অবরোধ দেয় নব্বইয়ের দশকে। এতে প্রায় পাঁচ লক্ষ শিশু অনাহারে মৃত্যুবরণ করে। ইরাকে দ্বিতীয় দফা হামলা ২০০৩ সালে করা হয় ব্যাপক মানববিধ্বংসী মারণাস্ত্রের কথা বলে। আর আরবরাষ্ট্রে যুদ্ধ আমেরিকা ইন্ধন যোগায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলে। কিন্তু সাকিব সাহেব সব গুলিয়ে শুধু মুসলিম মুক্তিকামী, প্রতিরোধযোদ্ধা বা বাস্তবিক সীমালংঘনকারী মুসলিমদের সংগঠনকেই সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।
পাশ্চাত্য থেকে সারা দুনিয়ায় ইসলামফোবিয়া তৈরি করা হয় এই কথা গুলো বলেই। তাদের বিখ্যাত শ্লোগান, সকল মুসলিম সন্ত্রাসী না হলেও সকল সন্ত্রাসীই মুসলিম, সন্ত্রাস ট্যাগ কেবলমাত্র মুসলিমদের জন্যই প্রযোজ্য। আর সাকিব সাহেব সুক্ষ্মভাবে সেই প্রচারণাই চালিয়েছেন। তিনি মুসলিম সংগঠনগুলোকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করলেও। কাফের গুলোকে সন্ত্রাসী বলতে নারাজ। যদিও কাফেরদের অপরাধ বা সিভিল ক্যাজুয়ালিটি কয়েক হাজারগুন বেশি।
মুসলিমদের এই স্বাধীনতাকামী বা বিচ্ছিন্ন কোন সাংগঠনিক তৎপরতাকে জোর গলায় সন্ত্রাস বলা হলেও যারা দূর্বল দেশের উপর আগ্রাসন চালিয়ে হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয়সহ ও লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে তাদেরকে কিন্তু সন্ত্রাসী বলা হচ্ছে না। শুধুমাত্র আমেরিকা পৌনে ১০০ বছরে তিন কোটি মানুষকে হত্যা করেছে কেবল নিজ সাম্রাজ্য বিস্তারে। কিন্তু বিধর্মী আক্রমণকারীরা সন্ত্রাসী নয় কেবল মুসলিম প্রতিরোধকারীরাই সন্ত্রাসী। রাশিয়ার আগ্রাসন সন্ত্রাস নয়, মুসলিম ভূখন্ডে ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা সন্ত্রাস, কট্টরপন্থা। আর টেন মিনিট স্কুলের এগুলো কোন ধরনের একাডেমিক ক্লাস ! এগুলো ক্লাস নাকি বাচ্চাদের ব্রেন ওয়াশ করার জন্য মার্কিনী রাজনৈতিক প্রপাগান্ডা?!!
এছাড়া সাকিব সাহেবরা সেকুলারিজম লিবারেলিজমের মতো পশ্চিমা ধ্বংসাত্মক চিন্তা গুলো নানাভাবে ছড়িয়ে যাচ্ছেন আগে থেকেই। ফি মিক্সিং , বেপর্দা মেয়েদের সাথে ঢলাঢলি তামাশা তো খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। আর এখন যুক্ত হলো সমকামীতা। আসলে শিক্ষকরা যখন বখে যায় শিক্ষার্থীদের তারা আর কী নৈতিকতা শেখাবেন চিন্তার বিষয়। আমরা আশা করবো টেন মিনিট স্কুলের শিক্ষকদের অচীরেই শুভ বুদ্ধির উদয় হবে এবং শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা ধ্বংসের কাজ থেকে বিরত হবেন। সমকামিতার বিষময় কুফল নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো ভালোই হিমশিম খাচ্ছে, আর আমরা চাই না মানববিলুপ্তির এ ভাইরাস আমাদের দেশে প্রবেশ করুক।
[তথ্যসূত্রঃ ২য় ও ৩য় ভিডিও যদিও দীর্ঘ তবুও সম্পূর্ণ ভিডিও দেখতে পারেন]
ুতথ্যসূত্র:
১.https://youtu.be/CkNRtDd3XBU
২.https://youtu.be/aD-BY036H1U (৪৫ মিনিট)
৩.https://youtu.be/kxu465oo9Ew(৪০ মিনিট)